রাত তিনটা বাজে, নিস্তব্ধ চারপাশ,
অচেনা এক আইডি— নাম ‘কাব্য’ আশ্চর্য আশ।
ভুরু কুঁচকে রিপ্লাই দিল এক নারী,
সাদিয়া—নাম তার, ঠান্ডা কিন্তু রঙিন তার আচারী।
– "আসসালামুয়ালাইকুম, আমি কি আপনাকে চিনি?"
– "জী না, কিন্তু চাইলে সারাজীবনের চেনা হতে পারি।"
– "ঠিক করে বলুন তো? এসব চিজি লাইন আমার পছন্দ না।"
– "জান্নাতের সঙ্গিনী হবেন?" (নীরবতা, ঠোঁটের কোণে হালকা হা হা!)
– "পুলিশে দেব কিন্তু!"
– "আমার ৪৪টা বাচ্চা বাঁচবে না আর একটুও।"
– "হাহাহা, ভালোই হবে, মেয়েদের জ্বালানো শেখবে না তারা।"
– "আপনার আইডি Zuckerberg মুছে দিক, এত ছবি ফেসবুকে ঠিক না।"
– "হিহিহি, আপনি ফ্লার্ট ভালোই করেন।"
– "এটা ফ্লার্ট না, অনেস্ট টু গড, আমি তো সোজা বর্ণে বলেছি মন!"
– "আপনার লেখাগুলো ভালো লাগে, হিউমার দুর্দান্ত।"
– "আমি তো লিখিই না…"
– "না লিখেই এমন? লিখলে তো প্রেমিক হয়ে যেতেন সাহিত্যিক!"
শেষে সাদিয়া বলল, “আচ্ছা, মা ডাকছে, পরে কথা হবে।”
কাব্য বসে রইল, চোখে চাহনি, মনে একরাশ হবে-না-হবে।
বলো যেতে পারলে না—
"আমি তোমায় ভালোবাসি..."
কারণ তার ভিতরের OS বলল,
"সাহসের ব্যালেন্স কম, অনুগ্রহ করে রিচার্জ করুন, ধন্যবাদ।"
প্রথম দেখা
সাদিয়া নামল রিকশা থেকে, শহরের গরমে ক্লান্ত,
শ্রেষ্ঠ দেখল— তার আগমন যেন স্লো-মোশনের এক চমৎকার ছন্দ।
পেছনে বাজছে হাবিবের গান:
"আমি তোমার মনের ভিতর একবার ঘুরে আসতে চাই..."
ঘামের গন্ধটাও লাগল যেন পারফিউমের মতো,
হয়তো প্রেমই এমন, গন্ধ নয়, অনুভবে ফোটে।
সাদিয়া তাকাল, হালকা হাসল—
শ্রেষ্ঠর পৃথিবী থেমে গেল, সময় যেন গলল।
পর্ব ৩: প্রথম হাত ধরা
হাতের তালু ঘামে ভিজে, হৃদয় বাজে ঢাক,
শ্রেষ্ঠ ভাবে, “আজ যদি ছুঁতে পারি, তবে সারা দিন রাখ।”
কফিশপে বসে সাদিয়া—চোখে চশমা, ঠোঁটে চা,
মনে হয় যেন গল্পের পাতায় আঁকা এক নিখুঁত ছায়া।
শ্রেষ্ঠর সামনে রাখা কাপে কফি ঠান্ডা হয়ে যায়,
তবু তার চোখ শুধু সাদিয়ায়—সদা সজীব, সদা ছায়।
বলে উঠল ধরা গলায়, “একটা কথা ছিল, বলবো কি?”
সাদিয়া হেসে বলল, “আবার কবিতা না শুরু করো, বুঝি!”
শ্রেষ্ঠ হাসে—লাজুক বেহালার মতো,
তবু কাঁপা কাঁপা হাতে বাড়ায় নিজের হাতটুকু ছোট।
সাদিয়া প্রথমে চমকে ওঠে, ঠোঁটে নীরবতা বাজে,
তারপর নিঃশব্দে আঙুল ছুঁয়ে বলে— “তাড়াতাড়ি হাত ছাড়িস না কিন্তু আজে-বাজে।”
হাত ধরল দুজন, পৃথিবী থেমে থাকল কিছুক্ষণ,
রাস্তার কোলাহল ডুবে গেল হৃদয়ের নিঃশব্দ অনুরণন।
একটা চড়ুই এসে জানালায় বসল, ছায়া পড়ে মুখে,
সেদিন প্রথমবার দুটো হাত জোড়া পড়ল— নিঃশব্দে, নিঃশর্তে।
*
সেদিন হঠাৎ সাদিয়া আর রিপ্লাই দেয় না,
শ্রেষ্ঠর ইনবক্সে শুধু “সিন”—তবু কোনো উত্তর না পাওয়া।
দিন যায়, ঘণ্টা গড়ায়,
মনের ভেতর শব্দ বাজে: “সে কি তবে বদলে যায়?”
সাদিয়া তখন ক্লাসে, কানে হেডফোন,
কিন্তু মন তার আটকে শ্রেষ্ঠর শেষ টোন।
সে লিখেছিল “ভীষণ ব্যস্ত আছি”—
শ্রেষ্ঠ ভেবেছে, “তাহলে আমি কী? কিছুই না, বুঝি?”
অভিমান জমে, বার্তাগুলো আর যায় না,
শ্রেষ্ঠ ভাবে, “সে যদি চাইতো, একবার তো বলত না?”
অন্যদিকে, সাদিয়া ভাবে,
“আমি যদি একটু দেরি করি, তাতে কি সে হাল ছেড়ে দেয় তবে?”
দুই পাশে ছায়া, কিন্তু আলো ছিল মাঝখানে,
যা হারিয়ে গেলো ‘তুই বুঝলি না’ আর ‘আমি বলিনি’-র টানে।
একটা ‘সরি’ হয়তো ঠিক করে দিত সব,
একটা ‘ভালোবাসি’ মুছে দিত শত অভিমান-জবাব।
কিন্তু না—
ইগোর দেয়ালে চুপচাপ চিঠি লেখা হয়,
“ভুল বুঝেছিস তুই”—অথচ কেউ তা খামে ভরে না আর কখনো পাঠায়।
অবশ্যই, আসুক অপেক্ষার সেই অনুভূতি, যখন ভালোবাসা ঠেকিয়ে রাখে, কিন্তু সময় আর পরিস্থিতি তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
---
**পর্ব ৬: অপেক্ষা**
শ্রেষ্ঠ জানে, সাদিয়া তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অপেক্ষা,
এমন এক অপেক্ষা, যা ক্ষণ-ক্ষণ করে কেটে যায়,
তবে কোনো দিন শেষ হয় না।
ভালোবাসা তখন তীব্র হয়, আর কখনো আছড়ে পড়ে না।
সাদিয়া ব্যস্ত, সে এখন তার স্বপ্নের পথে,
পথের শেষ কোথায়—কিছুই জানা নেই, তবে কোনো একদিন হয়তো
তাদের মেলানো দৃষ্টি আবার ফিরে আসবে,
যেখানে তাদের চাহনি একে অপরকে চিনে নিয়ে আবার কথা বলবে।
শ্রেষ্ঠের মনে সেই দিনটা ঘুরে ফিরে আসে,
যখন সাদিয়া বলেছিল, “এখন সময়ের প্রয়োজন,
শুধু একটা সুযোগ দিতে হবে, আমি সময় পেলে সব ঠিক করে দেবো।”
এটা শুধু একটা কথা ছিল, কিন্তু শ্রেষ্ঠ জানে—
তাদের সম্পর্কের মধ্যে এই কথাটা স্বপ্নের মতো ছিল।
তিনটি মাস কেটে গেছে,
অফিস, বন্ধু, ক্লাস, জীবনের ছোট ছোট মুহূর্ত—
সব কিছুই চলতে থাকে, কিন্তু একটা চুপ চাপ অপেক্ষা বাজে।
শ্রেষ্ঠর ফোনে সাদিয়ার ‘seen’ আসা,
মেসেজে প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া—সবই যেন একটা স্থিরতা।
এদিকে, সাদিয়া নিজেও জানে না—
এ অপেক্ষা কখনো শেষ হবে কিনা।
কিন্তু সাদিয়া জানে,
এটাই তো তাদের ভালোবাসা—সেই অমীমাংসিত কথাটা,
সেই একবারের "ভালোবাসি" বলতে না পারার হতাশা।
তবে শ্রেষ্ঠের মতো, সাদিয়া জানে,
এ অপেক্ষা একদিন শেষ হবে,
শুধু তাদের হাতে পৌঁছানোর পথটা,
এটা আগের মতো সরল থাকবে না।
তারা আবার কথা বলবে, কিছু বলার জন্য নয়,
বলবে শুধুমাত্র, **"এখন আর অপেক্ষা করতে হবে না।"
পর্ব-৭
নির্জন এক সন্ধ্যা,
আকাশে হালকা মেঘ, বাতাসে হিমের গন্ধ।
শ্রেষ্ঠ আর সাদিয়া হাঁটছে ধীরে ধীরে,
পাশে হাত ছুঁয়ে যায়, তবু কেউ হাত ধরে না সোজাসুজি করে।
চুপচাপ পথ,
কথার চেয়ে নীরবতাই বেশি স্পষ্ট।
শ্রেষ্ঠর বুকের ভিতর বাজে—
“আজই বলবো, আর না থামি, না লুকাই…”
সাদিয়া তখন ব্যস্ত বাতাসে চুল সামলাতে,
শ্রেষ্ঠ তাকিয়ে থাকে তার দিকে, এক শাশ্বত মুগ্ধতায় হারাতে।
হঠাৎ থেমে যায় সে, বলে—
“একটা কথা আছে… অনেক দিন ধরে জমে আছে…”
সাদিয়া থামে, চোখে জিজ্ঞাসু চাওয়া,
"কি কথা?"—নরম কণ্ঠে, যেন অজানা জানা।
শ্রেষ্ঠর কণ্ঠ কাঁপে, তবু বেরোয়—
“ভালোবাসি তোমায়।”
এক মুহূর্ত স্তব্ধতা।
পাখি থেমে যায়, বাতাস বোবা হয়ে দাঁড়ায়।
সাদিয়ার চোখ জ্বলজ্বল, ঠোঁটে ধরা হাসি,
সে কিছু বলে না, শুধু হালকা করে ধরে শ্রেষ্ঠর আঙুলখানি।
এই তো উত্তর।
না বলা কথার মধ্যে সেই বলার ছায়া থাকে,
ভালোবাসি শুধু মুখে না, চাহনিতেও লেখা থাকে।
পর্ব ৭: বিয়ের স্বপ্ন
—কালুখা
ভোরের সূর্য উঠে, সাদিয়া আর শ্রেষ্ঠ একে অপরের দিকে তাকিয়ে,
হাসছে, তবে চোখে এক অবর্ণনীয় স্বপ্নের আলো।
শ্রেষ্ঠ জানে, এখন সে যে মুহূর্তের অপেক্ষা করছিল,
তা এখন সামনে—এটা আর কোনো গল্প নয়, বাস্তব।
সাদিয়া ভাবে, “আমাদের জীবনের গল্পটা কতটা সুইট হতে পারে…”
শ্রেষ্ঠ জানে, তবে এই পথটা একদম সোজা নয়।
অনেক বাঁক, অনেক সিদ্ধান্ত—
তবে এখন তাকে শুধু এগিয়ে যেতে হবে, হাত ধরে।
সাদিয়া চোখে চোখ রেখে বলে,
“তুমি কি সত্যিই আমার সঙ্গে থাকো, শ্রেষ্ঠ? আমি কি তোমার জীবনের সঙ্গিনী হতে পারি?”
শ্রেষ্ঠের হাত, তখন সাদিয়ার হাতে চলে আসে,
এ যেন একটা প্রতিজ্ঞা—যত বিপদ আসুক, একে অপরের পাশে থাকা।
"তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন," শ্রেষ্ঠ বলে,
এখানে কোনো সন্দেহ নেই, কোনো দ্বিধা নেই।
সাহস, ভালোবাসা, এবং সহ্যশক্তি—এই তিনে গড়া।
সাদিয়া জানে, এটাই তার পরিণতি।
একদিন তারা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে,
পেছনে ফেলে দেবে সব কষ্টের মুহূর্ত—
এমন এক জীবনে যেখানে বিয়ের স্বপ্ন পূর্ণতা পাবে।
একসাথে হাঁটবে তারা, হাতে হাত, ভবিষ্যতের পথে।
তাদের মাঝে এক অন্যরকম প্রার্থনা—
একা না, বরং একসাথে থাকার শপথ,
একটি জীবন, একসাথে, সম্মান, প্রেম, আশা।
তাদের গল্প তখন লিখবে না কেবল কাগজ—
যতদিন তারা একে অপরের পাশে, ততদিন তা হয়ে থাকবে অমর।
Comments
Post a Comment